![]() |
Photo credit:Pixabay |
গ্রামের মানুষের দিন শুরু হয় ভোরের আলো ফুটতেই। মোক্তার চাচা প্রতিদিন সকাল ৫টায় উঠে গরুগুলোকে জল খাওয়ানোর কাজে লেগে যান। তাঁর কথায়, "গরু না খাওয়ালে পেটে ভাত জোটে না"। গ্রামীণ জীবনের এই কর্মব্যস্ততা শহুরে অফিসের রুটিন থেকে একেবারেই আলাদা।
মধ্যাহ্নের রোদ যখন প্রখর হয়, তখন দেখা যায় বটগাছের নিচে জমে উঠেছে আড্ডা। বৃদ্ধ জমির উদ্দিন সর্দি কাশির জন্য নিমপাতা সিদ্ধ করার উপকারিতা বর্ণনা করছেন তরুণদের। এই চিরাচরিত চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রামবাংলার অলিখিত সম্পদ।
নবান্ন উৎসবে গাঁয়ের মেয়েরা মাথায় করে নিয়ে যায় নতুন ধানের শিষ। বৈশাখী মেলায় বাঁশি বিক্রেতা লালমিয়া হাক ছাড়েন, "এক টাকায় তিনটি বাঁশি!"। এসব দৃশ্যে ফিরে পাওয়া যায় আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতি।
ধান কাটার মৌসুম এলো গাঁয়ে
কিষাণের হাসি ছড়ায় বাতাসে
নতুন চালের গন্ধ মাখা ভাতে
মায়ের হাতের ঝোলের স্বাদে...
বর্ষা মৌসুমে কৃষক রবিউলের চিন্তা ভিন্ন রকম। "পাঁচ কাঠা জমির ধান ডুবে গেলে পরিবার চালাবে কী করে?" এই প্রশ্ন তাঁকে রাতের পর রাত জাগায়। তবুও প্রতিবারের বন্যায় নতুন করে লড়াই করার সাহস জোগায় গ্রামবাসীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
গ্রামের স্কুল শিক্ষক সুমি আক্তার বললেন, "অনেক মেয়ে এখনও নবম শ্রেণী পার করতে না করতেই বিয়ে হয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করি অভিভাবকদের বোঝানোর।"
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এখন গ্রামের মানুষও বিশ্বসংসারের সাথে যুক্ত। জেলে সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, "স্মার্টফোনে আবহাওয়ার খবর জেনে এখন মাছ ধরার পরিকল্পনা করি।" তবে প্রযুক্তির এই সম্প্রসারণের মধ্যেও টিকে আছে গ্রামীণ জীবনের সরলতা। এখনও অনেক বাড়িতে দেখা যায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল আর বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র।
কিছু যুবক শহরে গিয়ে কাজ শিখে গ্রামে ফিরছে নতুন উদ্যোগ নিয়ে। মেহেরপুরের রাসেল মিয়া তৈরি করেছেন জৈব সারের কারখানা। তাঁর কথায়, "চাষাবাদে রাসায়নিকের ব্যবহার কমালে মাটির স্বাস্থ্য ফিরে পাবে।" এই প্রচেষ্টাগুলোই তো বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
গ্রামীণ সমাজের চালিকা শক্তি এই নারীরা। সকালে শিশুকে স্কুলে পাঠিয়ে নিজে ধানক্ষেতে কাজ করা, বিকেলে গৃহস্থালির কাজ সামলানো - এই তাদের দৈনন্দিন রুটিন। নারী সমিতির সদস্যা ফরিদা বেগম বলেন, "আমরা এখন আয়ের পথ তৈরি করেছি হস্তশিল্পের মাধ্যমে। পাটের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি হয় শহরেও।"
গ্রামীণ জীবনের এই পরিবর্তনশীল ধারা আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। যান্ত্রিকতার যুগেও টিকে থাকুক গ্রামবাংলার সরল সৌন্দর্য - এই হোক আমাদের সকলের কামনা।
মাটির ঘ্রাণে ভরা বাংলা মা
গ্রামের পথে পথে প্রাণের ছোঁয়া
যুগে যুগে বেঁচে থাকুক এই
সোনালি সকালের রূপকথা...
Post a Comment